ব্রাহ্মন ও পুরোহিতের মধ্যে পার্থক্য কী ?
ব্রাহ্মন আর পুরোহিত এক নয়। কোনো ব্যক্তি জন্ম থেকে ব্রাহ্মন হয় না।
জন্মানে জায়তে শুদ্রাহা
সংস্কারাত বিনোজায়তে।
জন্মের সময় সকল ব্যক্তি শুদ্র হয়ে জন্ম গ্রহন করে। সংস্কারের মাধ্যমে সে ব্রাহ্মনে পরিনত হয়।
প্রত্যেক ব্যক্তি জন্মে শূদ্র। কর্মে ক্ষত্রিয়। অর্থ সংগ্রহে বৈশ্য এবং ব্রহ্মজ্ঞানে ব্রাহ্মন।
যে ব্যক্তি ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করেছেন সেই ব্যক্তিই ব্রাহ্মন।এই পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান ব্রহ্মজ্ঞান। কারন জ্ঞান তিন প্রকারঃ
● প্রকৃতি জ্ঞান,
● আত্ম জ্ঞান ও
● দেহ জ্ঞান।
এই তিন প্রকার জ্ঞানের বাইরে পৃথিবীতে কোনো জ্ঞান নেই। যার মধ্যে নব গুন বিদ্যমান তিনিই ব্রাহ্মন। যদি কোনো পৈতাধারী পুরোহিত ব্যক্তির মধ্যে ব্রহ্মজ্ঞান ও নবগুন না থাকে সে ব্রাহ্মন নয়।
সনাতন মতে ব্রাহ্মনের নবগুন
১) শম — চিত্তসংযম, মনকে সন্তুষ্ট রাখা।
২) দম — ইন্দ্রিয় সংযম ( জ্ঞান ইন্দ্রিয় — চোখ, কান,নাক, জিভ, ত্বক। কর্ম ইন্দ্রিয়— মুখ,হাত, পা, গুহ্য, লিঙ্গ)।
৩) ক্ষমা — পাপীদের ক্ষমা করা।
৪) তপস্যা — পরমব্রহ্মের তপস্যা করা।
৫) শৌচ —- নবদ্বার শুদ্ধরাখা, শুদ্ধবস্ত্র পরিধান করা ও সর্বদা পবিত্রতা বজায় রাখা।
৬) আস্তিক্য — ধর্মে অটুট বিশ্বাস রাখা।
৭) আর্য — আর্য ধর্ম বজায় রাখা।
৮) জ্ঞান — পূর্নরূপে পরমব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করা।
৯) বিজ্ঞান — বিজ্ঞানের দ্বারা সকল কিছু বিশ্লেষন করা।
● সনাতন মতে আর্য গুন
যে শান্ত, ধৈর্য্যশীল, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী, মানবতাবাদী, অহংকারের বসে গর্ব করে না, যে ধর্ম রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে, যে লোভী নয়, যে মোহ বা নেশায় আশক্ত নয়, যে সকলের বিশ্বাসী ও বন্ধু, যে সদাসত্য কথা বলে ও সত্যের পথে চলে,যে সকল আর্যকে দেবতা মানে, যে বিশ্বাস করে সকল আত্মাই পরমব্রহ্মের অংশ, যে বিশ্বাস করে পরমব্রহ্ম দশ ভাগে বিভক্ত হয়ে এই সৃষ্টি কে রক্ষা করেন তিনিই আর্য বা দেবতা।
জ্ঞান সাধনায় ব্রাহ্মনের ভাগ চার প্রকার —
১) সাধু
২) সন্ন্যাসী
৩) মুনি বা ঋষি
৪) পুরোহিত।
পুরোহিত দুই প্রকার —
১) দ্বিজ – যিনি পৈতা ধারনকরে পরমব্রহ্মকে পুজার মাধ্যমে পাপ দান করেন এবং এই জগতকে নবগুন দ্বারা রক্ষা করেন তিনি হলেন দ্বিজ।
২) বামুন– আর যে ব্যক্তি পৈতাধারন করেও নবগুন অর্জন করতে পারেন না তিনি হলেন বামুন।
প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তি সাধু ব্যক্তির সমতুল্য।